শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলির চালক জাতিবাদ

কীভাবে জাতিবাদ আধুনিক ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রকাশিত এবং সমৃদ্ধ হয় তা আমাদের সামনে এলো দলিত, বহুজন ও আদিবাসী সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ এবং কর্মীদের মধ্যে একটি অনলাইন আলোচনার মাধ্যমে।
By | Published on Jul 29, 2021

‘দ্য লাইফ় অফ় সায়েন্স’ সদস্যদের সাহায্যে সায়ন্তন দত্ত; অনুবাদে দেবদত্ত পাল

This article was originally written in English and can be read here. This translation is by Debdutta Paul.

সতর্কতা: জাতিবাদী নির্যাতন, আত্মহত্যার উল্লেখ

এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু ভ়িডিও প্রকাশিত হল, যাতে দেখা গেলো আই.আই.টি খড়্গপুরের (IIT-KGP) সহযোগী অধ্যাপিকা সীমা সিং একটি অনলাইন ক্লাস চলাকালীন প্রান্তিকজাতির অথবা/এবং শারীরিক অক্ষমতাসহ শিক্ষার্থীদের গালাগালি করছেন। এই ক্লাসটি চলাকালীন একজন শিক্ষার্থী রাষ্ট্রগীতির সময়ে উঠে না দাঁড়ানোয়ে এবং ‘ভারতমাতা কী জয়’ না বলার ফলে তাঁর এমন আচরণ বলে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন। আর একটি ভ়িডিওয়ে দেখা যায় যে সিং প্রকাশ্যে একটি ছাত্রীর ই-মেলের উত্তর দিচ্ছেন, যেখানে সেই ছাত্রী তাঁর কোভ়িড-১৯ আক্রান্ত ঠাকুরদাদার মৃত্যুর কারণে কিছুদিনের জন্য ছুটি প্রার্থনা করেছেন। উত্তরে, সিং সেই ছাত্রীর ই-মেলটিকে “মানববুদ্ধির নিষ্প্রয়োগ” সহ বিভিন্ন তক্মা দিয়েছেন। এই ভ়িডিওগুলিতে তিনি বলেছেন আই.আই.টি খড়্গপুরের শিক্ষকমণ্ডলী সর্বক্ষমতাবান, এবং জানিয়েছেন, “তোমরা আমায় কিচ্ছু করতে পারবে না।” খেয়াল রাখা জরুরী যে এই ঘটনাগুলি ঘটেছে আই.আই.টি খড়্গপুরের দ্বারা পরিচালিত একটি অনলাইন প্রস্তুতিমূলক পাঠ্য চলাকালীন। এমন প্রস্তুতিমূলক পাঠ্য সকল আই.আই.টি-র (ইন্ডিয়ান ইন্স্টিটিয়ুট অফ় টেকনোলজি) দ্বারা পরিচালিত হয় তফশিলী জাতি (Scheduled Caste, SC), তফশিলী উপজাতি (Scheduled Tribe, ST), অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (Other Backward Class, OBC) এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীমূলক (Person with Disabilities, PD) শিক্ষার্থীদের জন্য, যাঁরা আই.আই.টি প্রবেশিকা পরীক্ষার ন্যুনতম প্রাপ্ত নম্বর পেয়েও আসন পায়নি। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা এই প্রস্তুতিমূলক পাঠ্যে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন, তাঁরা এক বছর পরে আই.আই.টি-তে প্রবেশিকা লাভ করেন, এবং তাঁদের এই সাফল্যের বিচার করার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে আই.আই.টি-র শিক্ষকমণ্ডলীর হাতে।

বিভিন্ন জাতিবিরোধী গোষ্ঠী এবং আই.আই.টি-র প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা এই ভ়িডিওগুলির প্রতি তাঁদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। আই.আই.টি—বোম্বের (IIT-B) ‘আম্বেডকার পেরীয়ার ফুলে অধ্যয়ন বৃত্ত’ (APPSC) সীমা সিং-এর আচরণকে প্রকাশ্যে নিন্দা করে এবং তাঁর পদত্যাগের দাবী জানায়‌। তারা এও দাবী জানায় যে তফশিলী জাতি ও উপজাতি মানুষদের উপর নৃশংসতা রোধ আইন বা SC/ST Prevention of Atrocities Act (PoA Act) -এর অধীনে সীমা সিং-এর আচরণ লিপিবদ্ধ করা হোক। সকল আই.আই.টি-তে জাতিভেদ রুখতে জাতিভেদবিরোধী কর্মমণ্ডলী তৈরী করা হোক বলেও তারা দাবী জানিয়েছে। হাজারের বেশী সংখ্যায় আই.আই.টি-র পুরনো শিক্ষার্থীরা IIT-KGP’র অধিকর্তাকে একটি চিঠির মাধ্যমে সিং-এর আচরণের প্রতি তাঁদের বিতৃষ্ণার কথা জানান এবং তাঁর পদত্যাগের দাবী রাখেন। টুইটারে #End_Casteism_in_IITs (আই.আই.টি-গুলিতে জাতিভেদ বন্ধ হোক) এই হ্যাশট্যাগটি প্রবণতা পায় এবং বহু জাতিভেদবিরোধী কর্মীরা IIT-B’র APPSC-র দাবীগুলিকে সমর্থন করেন। IIT-র ২৫ জন পুরনো ছাত্রীবৃন্দ IIT-KGP’র অধিকর্তাকে চিঠি লেখেন।

কিছুদিনের মধ্যে সীমা সিং তাঁর আচরণের জন্য ক্ষমা চান, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে তাঁর আচরণের কারণ হল তাঁর কোভ়িড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হ‌ওয়ার ফলে সামাজিক বিচ্ছিনতা অবলম্বন করা এবং ফলস্বরূপ মানসিক ধকল।

এই বিবরণটি লেখাকালীন সিং-কে তাঁর দ্বায়িত্বাবলী থেকে স্থগিত করা হয়েছে এবং তফশিলী জাতি ও উপজাতি মানুষদের উপর নৃশংসতা রোধ আইনের (PoA Act) অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। খেয়াল রাখা উচিৎ যে তাঁর দায়িত্বাবলী সমাপ্ত করা হয়নি, এবং IIT-B’র APPSC-র অন্যান্য দাবীগুলির সংক্রান্তে IIT-KGP’র তরফ থেকে কোন উত্তর আসেনি।

ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাতিভেদ প্রতক্ষে এবং পরোক্ষে বাস্তবায়িত হয়, এবং বিভিন্নভাবে, বহুরূপে, এবং বারবার তফশিলী জাতি ও উপজাতির শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জীবনে আঁচ ফেলে যায়। ঠিক কীভাবে জাতিবাদ এবং জাতিবৈষম্য উচ্চশিক্ষাস্তরে প্রতিনিয়ত পরিচালিত হয় তা গভীরভাবে বুঝতে TheLifeofScience.com গত মে মাসের ৮ তারিখে একটি লাইভ় ওয়েবিনারের মাধ্যমে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে। এই ওয়েবিনারটি এইখানে দেখা যেতে পারে‌।

একটি পুরনো পরম্পরা

“যদিও এমন বহিষ্কারমূলক আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়শ‌ই করা হয়, সীমা সিঃ-এর এই আচরণ অভিনব কারণ তা অনলাইন ঘটেছে। যে কথাগুলি তিনি বলেছেন, যেমনভাবে বলেছেন, এবং যে মানসিকতা থেকে বলেছেন, তা মোটেই নতুন নয়।” — বৈশালী খান্দেকার, নৃবেজ্ঞানী

যদিও সীমা সিং-এর ঘটনাটি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, এটা মাথায় রাখা জরুরী যে আই.আই.টি-গুলিতে জাতিবৈষম্যের উদাহরণ এটাই প্রথম নয়‌। আই.আই.টি–হায়দরাবাদের নৃবেজ্ঞানী বৈশালী খান্দেকার বিচক্ষণভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন: “যদিও এমন বহিষ্কারমূলক আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়শ‌ই করা হয়, সীমা সিঃ-এর এই আচরণ অভিনব কারণ তা অনলাইন ঘটেছে। যে কথাগুলি তিনি বলেছেন, যেমনভাবে বলেছেন, এবং যে মানসিকতা থেকে বলেছেন, তা মোটেই নতুন নয়।” IIT-KGP’র এই ঘটনাটির মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাদেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (BHU) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানের অনুষদপ্রধান কৌশল কুমার মিশ্র প্রান্তিকজাতির ডাক্তারদের এবং ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেডকার (বি. আর. আম্বেডকার)-কে উপহাস করে ফ়েসবুকে একটি পোস্ট লেখেন

ওয়েবিনারটির সকল বক্তারা বেদনার সাথে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতিবৈষম্য এবং কটুক্তির মাধ্যমে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার কথা‌। 2014 সালে IIT-B’র এক দলিত ছাত্র, অনিকেত আম্ভোরে, বহু উচ্চতা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর স্বীকার হন। যদিও এমনটা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি যে মৃত্যুটি ইচ্ছাকৃত না দুর্ঘটনার ফল, তাঁর বাবা-মা অভিযোগ করেন যে জাতিভেদসূচক হয়রানি সহ্য করতে না পারা অনিকেতকে আত্মহত্যার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বাদ্ধ করে‌। এর পর, IIT-B তিনজন সদস্যের একটি কমিটি গঠন ক’রে তার উপর মৃত্যুর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেয়। এই কমিটির সদস্যারা মৃত্যুসংক্রান্তে কী জানতে পারেন তা কখনোই প্রকাশ্যে জানানো হয়নি, তবে The Indian Express পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লিখিত হয় যে সেই কমিটি সিদ্ধান্তে আসে যে, জাতিবৈষম্য নয়, অনিকেতের মৃত্যুর কারণ তাঁর “অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ”। তবুও, কৌতূহল জাগায় কমিটির এই স্বীকৃতি: “এমনটা সম্ভব যে SC/ST কোটার (quota) মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে এবং ডিপার্টমেন্টে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। যার কারণ: সরকারের সংরক্ষণনীতির বিরুদ্ধে সেখানে উপস্থিত অন্যান্যদের কঠোর মনোভাব‌।”

অনিকেতের মৃত্যুর ঘটনা অনেক ঘটনার মধ্যে একটি। আরো সুপরিচিত ঘটনা হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের (UoH) দলিত পি.এইচ.ডি (PhD) শিক্ষার্থী রোহিত ভেমুলার মৃত্যু। রোহিত ভেমুলা এবং তাঁর বন্ধুরা স্পষ্টত‌ই যৌথভাবে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (ABVP) UoH শাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দ্বারা জাতিভেদ, জাতিবৈষম্য, নির্মমতা, এবং সামাজিক নির্বাসনের স্বীকার হয়েছিলেন। রোহিত একটি মর্মভেদী আত্মঘাতী চিঠি রেখে যান, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, “আমার জন্ম আমার প্রাণনাসক দুর্ঘটনা। আমি কখনো আমার শৈশবের একাকীত্ব থেকে উদ্ধার পাব না।” এর পর, ভারতের শীর্ষ বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ঘটে যাওয়া অনেকগুলি ভয়ানক জাতিবিদ্বেষকারী ঘটনা আমাদের সামনে আসে। যেমন, ডাক্তারি-অভিলাষী এস. আনিতা, বি.ওয়াই.এল নায়ার (BYL Nair) হাসপাতালের বাসিন্দা ডাক্তার পায়াল টাডভ়ি, য‌ওয়াহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালযয়ের (JNU) গবেষণা শিক্ষার্থী মুতুকৃষ্ণন, আই.আই.টি মাদ্রাসের (IIT-M)’র মাস্টার্স শিক্ষার্থী ফ়াতিমা লাতীফ়—এঁদের আত্মহত্যার, এবং JNU-র মাস্টার্স শিক্ষার্থী নাজীব আহমেদের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলি। সাংবাদিক মেকপীস সিট্লহৌ, যিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতিবৈষম্যের ঘটনাগুলি তাঁর সাংবাদিকতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, তিনি সাংবাদিকদের কাছে আবেদন করেন: “কেবল‌ই মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দেবেন না। মানুষকে তাঁদের জীবণ সমাপ্ত করা অবধি অপেক্ষা করবেন না, কারণ সেটি একটি ধাপ যা তাঁরা প্রচণ্ড হতাশার স্বীকার হয়ে নিয়ে থাকেন। সব সময়ে সকল কারণগুলি খতিয়ে দেখুন।”

কীভাবে আজকালকার ‘ভদ্র’ সমাজে জাতিভেদপ্রথা ও জাতিবৈষম্য নিরন্তর চালিয়ে যাওয়া হয় এবং SC/ST শিক্ষার্থীদের সাথে ভিন্নরূপ আচরণ করা হয় তার ওপর আলোকপাত করলেন ওয়েবিনারের পরিচালক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুভজিৎ নস্কর। তিনি তুলে ধরলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সুযোগ ও সামর্থ্যের প্রচণ্ড ঘাটতির ফলে চলাকালীন কোভ়িড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময়ে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে বাধাপ্রাপ্ত হন। তিনি এও জানালেন যে প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লিখিত পরীক্ষায় অসামান্য ফলাফল করলেও সাক্ষাৎকারস্তরে তাঁদের কম নম্বর দেওয়া হয়। ‘দলিত মহিলা সংগ্রাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা, পি.এইচ.ডি (PhD) শিক্ষার্থী রিয়া সিং তাঁর সহ্য করা একটি বিড়ম্বনার কথা স্মরণ করলেন। তাঁর ক্লাসের পড়ুয়াদের তাঁদের নিজ নিজ জাতির সম্বন্ধে নিজস্ব অভিজ্ঞতার বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দলিতসমাজের মানুষ হ‌ওয়া সত্বেও তাঁর প্রবন্ধটিকেই কম নম্বর দেওয়া হয়েছিল। নানা উদাহরণের মাধ্যমে তিনি জানালেন কীভাবে আপাতদৃষ্টিতে উদার এবং প্রগতিশীল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও সমাজে ধারাবাহিকভাবে প্রান্তিকজাতির মানুষদের প্রেরণা অর্জন করতে বঞ্চিত করা হয়। IIT-B’র APPSC’র সদস্য এবং পি.এইচ.ডি (PhD) শিক্ষার্থী তেজেন্দ্র প্রতাপ গৌতম এই বিষয়ে প্রশাসনিক কপটতা তুলে ধরলেন। তিনি জানালেন যে আই.আই.টি-র প্রাঙ্গণে সাবর্ণ হিন্দুদের উৎসবগুলি আড়ম্বরের সাথে চলতে দেন, অথচ যখন প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীরা জাতিবিদ্বেষবিরোধী শিক্ষার জন্য বক্তৃতার আয়োজন করেন, তখন সেই এক‌ই প্রশাসন নানান অপ্রয়োজনীয় ও অনুপযুক্ত বাধার সৃষ্টি করেন।

দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের (DU) অধ্যাপিকা রেহনামোল রবীন্দ্রন সংরক্ষণনীতির মাধ্যমে চাকরিসৃষ্টি এবং প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও অন্যান্য সম্ভাবনার কথা তুলে ধরলেন। তিনি মন্তব্য রাখলেন, “সংরক্ষণনীতি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলিকে আরো গণতান্ত্রিক করে তোলে। অন্তর্ভুক্তিকর প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে দলিত-বহুজন ব্যক্তিরা প্রশাসনিক এবং ক্ষমতাশালী অবস্থান লাভ করলে প্রতিষ্ঠানগুলিতে দলিত-বহুজন ছাত্রছাত্রীদের জন্য বসবাসযোগ্য এবং প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।” নীতিগতভাবে সংরক্ষণনীতি লাগু হ‍ওয়া সত্বেও শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলি এই নীতি লঙ্ঘন করে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, আই.আই.টি দিল্লীতে (IIT-D) ৩১টি এবং IIT-B’তে ২৬টি বিভাগে যথাক্রমে ১৫ এবং ১৬ টি বিভাগে 2020-তে একজন‌ও SC পি.এইচ.ডি (PhD) শিক্ষার্থীর অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়নিUoH এবং JNU -এর মতো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও সংরক্ষণনীতির উলঙ্ঘন করা হয়। একটি সংসদীয় কমিটি খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছে যে DU-তে যদিও সংরক্ষণনীতি অনুযায়ী ২৭% অধ্যাপকবৃন্দ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (OBC) জন্য সংরক্ষিত হ‌লেও আসলে কেবলমাত্র ৪% অধ্যাপকগণ সেই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত; লক্ষণীয় এও যে এই ৪%-এর মধ্যে একজন‌ও অ্যাসোসিয়েট প্রফ়েসর এবং প্রফ়েসরের মতো উচ্চ অধ্যাপক পদগুলি অধিকার করেন না।

1990 সালে মণ্ডল কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশে সরক্ষণনীতির বাস্তবায়ন হয়, এবং এর পরেই তার বিরুদ্ধে দেশের কোণে কোণে প্রতিবাদের ঢল নেমে আসে। তাতে সামিল হন DU-র শিক্ষার্থীরাও। এমনকি, DU-র ছাত্র রাজীব গোস্বামী প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে নিজেকেই উৎসর্গ করেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় 2006 সালে, যখন পুনরায় ভারত সরকার ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (OBC) মানুষদের জন্য সংরক্ষণনীতি বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করে। অল ইন্ডিয়া ইন্স্টিটিয়ুট অফ় মেডিকাল সায়েন্স (AIIMS, এইমস) এবং বিভিন্ন আই.আই.টি-র শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকশিক্ষিকারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদের আয়োজন করেন। 2008 সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত OBC ‘ক্রীমি লেয়ার (creamy layer)’, বা সেই OBC মানুষজন যাঁদের পারিবারিক আইন বছরে ৪·৫ লাখের বেশী, তাঁদের বাদ দিয়ে বাকি সকল OBC মানুষজনদের জন্য সংরক্ষণনীতি বহাল রাখে‌। 2007 সালে ইউনিভ়ার্সিটী গ্রান্টস কমিশনের (UGC) সভাপতি সুখদেও থোরাটের নেতৃত্বে একটি কমিটি জাতিভেদ ও জাতিবৈষম্যের ওপর তদন্ত চালায়। থোরাট কমিটির প্রতিবেদন এইমস-এ জাতিভেদের মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন সুপারিশ করে। যেমন, একটি ‘সমান সুযোগ মণ্ডলী’ গঠনের পরামর্শ দেন এবং জানান যে ভারতের স্বাস্থ্যসেবামন্ত্রক এইমস-এ সংরক্ষণনীতির বাস্তবায়নের উপর কড়া নজর রাখুক। আজ‌ও আমরা থোরাট কমিটির সুপারিশের বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করে আছি, অন্যদিকে সংরক্ষিত শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বৈষম্য ও অপমানের স্বীকার হয়ে চলেছেন।

আমাদের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাতিভেদ কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়?

“আই.আই.টি-গুলিতে দলিত ও বহুজন শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারে এমন কোন স্থান নেই; এই পরিস্থিতিতে বৈষম্যের পরে আই.আই.টি ছেড়ে চলে যাওয়া অথবা আত্মঘাতী হ‌ওয়া ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোন পথ পরে থাকে না। ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণে নিজস্ব সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংহতি তৈরী করতে দলিত-বহুজন সংগঠনের প্রয়োজন, যাতে তাঁরা একলা নয়, একত্রিতভাবে তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।” — DU-র অধ্যাপক রেহনামোল রবীন্দ্রন

ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতিবাদ এবং জাতিবৈষম্যকে বাঁচিয়ে রাখে কে? তেজেন্দ্র এবং শুভজিৎ আমাদের মনে করিয়ে দিলেন যে, আম্বেডকার বলেছিলেন, “শিক্ষালাভ করো, আন্দোলন করো, সংগঠিত হ‌ও”; অথচ, সাবর্ণ ব্যক্তিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবহাওয়া ও প্রাঙ্গন থেকে প্রান্তিকজাতির মানুষদের এমনভাবে বঞ্চিত করে রাখেন যে প্রান্তিকজাতির মানুষরা তাঁদের সামাজিক পীড়ন থেকে মুক্তির পথে প্রথম ধাপ, শিক্ষলাভ করা, সেখানেই বাধাগ্রস্ত হন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে প্রান্তিক মানুষদের দূরে রাখার বিভিন্ন উপায়ের আলোচনায় বিস্তারিত হল। সাবর্ণসমাজ যেভাবে জাতিভেদ টিকিয়ে রাখে তার বহু রূপ হ‌ওয়া সত্বেও সেই প্রতিক্রিয়াগুলিকে তিনটি বৃহৎ ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমতঃ, উচ্চশিক্ষার প্রাঙ্গণগুলি ক্রমশ‌ই অরাজনৈতিক করে তোলা। দ্বিতীয়তঃ, উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রান্তিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে রাখা। এবং তৃতীয়তঃ, সাবর্ণ মানুষদের জ্ঞান বিস্তারের ও প্রচারের ধারাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা‌।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণকে অরাজনৈতিক করে তোলা কীভাবে জাতিবৈষম্য বহাল রাখে তার ওপর জোর দিলেন রেহনামোল। ভারতের অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেমন আই.আই.টি-গুলিতে, এটি বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। আই.আই.টি-গুলিতে কোন শিক্ষার্থীদের কোনরকম রাজনৈতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠান করা বারণ, এবং যে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন, তাঁদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দে‌ওয়া হয়; আর যাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন তাঁদের উচ্চ পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দে‌ওয়া হয়। উপরন্তু, প্রশাসনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মুখে তুলনায় বেশী পড়েন প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা। রেহনামোল বলেন, “আই.আই.টি-গুলিতে দলিত ও বহুজন শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারে এমন কোন স্থান নেই; এই পরিস্থিতিতে বৈষম্যের পরে আই.আই.টি ছেড়ে চলে যাওয়া অথবা আত্মঘাতী হ‌ওয়া ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোন পথ পড়ে থাকে না। ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণে নিজস্ব সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংহতি তৈরী করতে দলিত-বহুজন সংগঠনের প্রয়োজন, যাতে তাঁরা একলা নয়, একত্রিতভাবে তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।”

বিজ্ঞানে এবং বিজ্ঞানকেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনাগুলি বেশী হয়ে থাকে‌। স্বাধীন গবেষক রাচেল ভারতী চন্দ্রন মনে করিয়ে দিলেন যে কোন অধ্যাপক বা অধ্যাপিকাকে বিজ্ঞানের কোন শিক্ষার্থী যদি জাতিবিদ্বেষী আচরণের জন্য প্রকাশ্যে আনেন, তাহলে তাঁর নিজের‌ই বিজ্ঞানপেশায় ইতি টানার সমান হবে। এর কারণ হল বিজ্ঞান সম্প্রদায় অত্যন্ত একত্র এবং অসহিষ্ণু। উপরন্তু, বিজ্ঞানচর্চা নিজেকে বস্তুগত বলে ধারণা করে, ফলত বৈজ্ঞানিকদের‌ও নিজেদের বিষয়ে এমনটাই ধারণা। তাঁরা যোগ্যতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের মতো কিছু খামখেয়ালী বিচারধারাকে সম্মান দেন। তাই এমনটা প্রচার হয় যে বিজ্ঞান কখনোই রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না—যে মানসিকতা থেকে বোঝা যায় কেন সংরক্ষণনীতির বিরুদ্ধে 2006 সালের প্রতিবাদ প্রধানত‌ই বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে উঠে এসেছিল, স্বাক্ষরের মাধ্যমে আই.আই.টি রূরকীর ২,৫০০ জন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছিলেন। আসলে, বিজ্ঞানচর্চা সামাজিক এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে মোটেই মুক্ত নয়। চর্চার মাধ্যমে জানা গেছে কীভাবে আই.আই.টি এবং আই.আই.এস.সি (ইন্ডিয়ান ইন্স্টিটিয়ুট অফ় সায়েন্স) -এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি জাতিভেদপ্রথার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়‌।

দ্বিতীয়তঃ, উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রান্তিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে রাখা। ভারতের উচ্চশিক্ষাস্তরে সাবর্ণজাতির মানুষদের যে ব্যাপক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সাংবাদিক দিলীপ মণ্ডল এই ব্যাপারে জোর দিলেন যে, যদিও আজকাল শ্রেণিকক্ষে প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাওয়া যায়, শিক্ষককক্ষে কেবল সাবর্ণজাতির শিক্ষক-শিক্ষিকারাই বিরাজমান। TheWire.in-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকল আই.আই.টি-গুলি মেলালে অধ্যাপকমণ্ডলীর মধ্যে সংরক্ষিত (SC/ST) বিভাগের অধ্যাপকদের অনুপাত ৩%-এর‌ও কম।

সাবর্ণ মানুষদের এমন প্রবল আধিপত্যের কিছু সুদূরপ্রসারী পরিণতি হতে পারে‌। এই আধিপত্যের ফলে সাবর্ণ ব্যক্তিরা মনে করেন যে তাঁদের জাতিভেদমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কিচ্ছু করা হবে না, তাঁরা সেই আচরণের জন্য দায়মুক্ত। এর মাধ্যমে বোঝা যায় কেন সীমা সিং ক্লাসটিতে তাঁর যা ইচ্ছে হয়েছে বলেছেন। তিনি ভ়িডিওগুলিতে অহঙ্কার করে বলেছেন যে কেউ, এমনকি “সংখ্যালঘু কমিশন”-ও তাঁকে কিচ্ছু করতে পারবে না। ‘সমান সুযোগ মণ্ডলী’গুলির দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণে জাতিবৈষম্যের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা, তবুও সেগুলির গঠনেও এই আধিপত্যের প্রভাব ঘটে। মেকপীস এবং UoH-এর পি.এইচ.ডি (PhD) শিক্ষার্থী শালিনী মহাদেব ব্যক্ত করেছেন যে, প্রান্তিকজাতির মানুষদের কোন জাতিবৈষম্যমূলক ঘটনাটি তেমনটা ‘প্রমাণ’ করতে প্রবল বেগ পেতে হয়, যাতে গোটা প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত বিলম্বিত এবং মানসিকভাবে পীড়াজনক হয়ে ওঠে। উপরন্তু, এই কমিটিগুলির বিবরণ কখনোই প্রকাশ্যে জানা যায় না। IIT-KGP’র এই ঘটনাতেও এই প্রতিষ্ঠান কমিটির গঠনের ব্যাপারে নিশ্চুপ।

উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি যে তৃতীয় উপায় জাতিবিদ্বেষ বজায় রাখে তা হলো ‘যোগ্যতা’ ধারণাটির উপর ভর করে। এই ধারণাটি অনুশাসন করে কাঁরা কোন ধরণের জ্ঞান অর্জন এবং প্রচার করতে পারেন। সংরক্ষণনীতি প্রান্তিক মানুষদের শিক্ষা এবং চাকরির মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এমন এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে না দেখে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করেন যে সংরক্ষণনীতি প্রতিষ্ঠানগুলির গুণতন্ত্রে আঘাত করে‌। শক্তিশালী যুক্তি এবং স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে ‘যোগ্যতা’ একটি খামখেয়ালী, পক্ষপাতদুষ্ট, এবং বৈষম্যমূলক নির্ণায়ক, অথচ এই যুক্তি এবং প্রমাণ সাধারণত উপেক্ষা করা হয়। বৈশালীর ধারণা যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ জাতিবাদ প্রকাশ পায় “দলিত শিক্ষার্থীর সন্দেহজনক যোগ্যতা”-র মতো ধারণাগুলির মাধ্যমে, যা পদ্ধতিগতভাবে জাতিভেদবিরোধী বিদ্যাবত্তাকে মুছে ফেলেছে। এর উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখতে পারি কীভাবে বিদ্যালয়ের ব‌ইগুলিতে ডঃ আম্বেডকারকে কেবলমাত্র “ভারতীয় সংবিধানের জনক” হিসেবেই দেখানো হয়, তাঁর লেখা অনেক বিপ্লবী সাহিত্য, যা আজ‌ও প্রাসঙ্গিক, তার ব্যাপারে জানতে দেওয়া হয় না। বৈশালী দৃঢ়তাসহকারে জানিয়েছেন যে প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের জাতিভেদবিরোধী এমন সাহিত্য চর্চা করা প্রয়োজনীয় এবং দরকারী। UoH-এর শিক্ষার্থী এবং আম্বেডকার শিক্ষার্থী সমিতির (ASA) সাধারণ সম্পাদক (দায়িত্ব) প্রাজ্বাল গায়েক‌ওয়াড এমনটাও যোগ করলেন যে প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের জাতি ভিন্ন অন্যান্য শিক্ষা ও জ্ঞানশৃঙ্খলার সাথে জড়িত হতে সক্রিয়ভাবে নিরুৎসাহ দে‌‌ওয়া হয়। এর ফলে, প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের এই ভিন্ন শৃঙ্খলাগুলিতে অবদান রাখার পথে বাধার সৃষ্টি হয়, যার ফলে এই অপরিবর্তনীয় এবং ভুল ধারণাটি অব্যাহত থাকে যে, প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র জাতিভিত্তিক আলোচনা এবং সাহিত্যরচনাই করতে পারেন।

ওয়েবিনারের সকল বক্তারা এই বিষয়ে একমত হলেন যে, জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষাপ্রদান করতে এবং শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে আইন এবং বিচারব্যবস্থার কমতি রয়েছে। এই কারণে রোহিতের মৃত্যুর পরে “রোহিত আইন”-এর দাবী জানানো হয়েছিল। প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জাতিভেদের হাত থেকে মুক্তির জন্য আপাতত নেওয়া পন্থাগুলি অসম্পূর্ণ বলে তাঁরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। এমন পন্থার এক মুখ্য উদাহরণ হল আই.আই.টি-র এক বছরের প্রস্তুতিমূলক পাঠ, যা সীমা সিং-এর ঘটনাটির মাধ্যমে আমাদের সামনে আসে। মেকপীসের মতে, এই প্রস্তুতিমূলক পাঠগুলি প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে নয়, সাবর্ণ মানুষদের আত্মতুষ্টির জন্য স্ব-অনুভূত উদারতা প্রকাশের ভান মাত্র। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে এই পাঠটির একটি আগে-ও-পরে মূল্যায়ন করলে তবেই সেটির কার্যকারিতা বিচার করা যাবে।

“আমরা এখানে মরতে আসিনি”: সামনের পথ

ওয়েবিনার চলাকালীন শালিনীর দ্বারা উচ্চারিত একটি বাক্যাংশ সবার মনে দাগ কেটে গেল: “আমরা এখানে মরতে আসিনি।” শালিনী এবং বাকি বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি করতে যে পরামর্শগুলি দিলেন, তা নীচে সংক্ষিপ্ত করা হল:

[১] বহুজন মানুষদের সংহতি, সহায়তা, ও ক্ষমতায়ন বাড়াতে প্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গনে বহুজন মানুষদের সম্প্রচার ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। বিরসা আম্বেডকার ফুলে শিক্ষার্থীসংগঠন (BAPSA), ASA বা APPSC-র মতো শিক্ষার্থীসংগঠনগুলি প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের মানবাধিকারের জন্য লড়াই তো করেই, উপরন্তু তাদের মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে সংহতি ও সহায়তার প্রক্রিয়াও গড়ে ওঠে।

[২] সংরক্ষণনীতির বাস্তবায়নের ওপর আরো জোর দিতে হবে।

[৩] প্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণে জাতিবিদ্বেষমূলক বিদ্রূপ ও আচরণ সামলাতে আইনত ও প্রশাসনিক উপায় থাকতে হবে। রোহিত আইনের গঠন এবং বাস্তবীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমান সুযোগ মণ্ডলী, যা প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন পূরণ করে, তা গুরুতর, এবং মণ্ডলীগুলির কার্যকারিতা তদারকি করার জন্য প্রান্তিকজাতির মানুষদের নিযুক্ত করা উচিৎ।

[৪] প্রান্তিকজাতির মানুষদের মধ্যে রাজনৈতিক শক্তির বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োজন। যে রাজনৈতিক দলগুলি আম্বেডকার, ফুলে ও পেরীয়ারের মতাদর্শ মেনে চলে, তাদের সমর্থন করতে হবে।

[৫] উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে জাতি এবং জাতিবাদ সংক্রান্ত আলোচনায় উৎসাহ দিতে হবে।

[৬] কেবলমাত্র প্রান্তিক মানুষদের মৃত্যুর সময়েই নয়, গণমাধ্যম এবং সাংবাদিতকার মাধ্যমে জাতিবাদ এবং জাতিবৈষম্য ঘীরে প্রতিবেদনে সব সময়ে জোর দিতে হবে।

[৭] SC/ST/OBC মণ্ডলী গঠন করতে হবে, যা কেবলমাত্র এই প্রান্তিকজাতির মানুষদের দ্বারাই গঠিত হবে।

[৮] প্রান্তিক, ভিন্ন জাতির মানুষদের মধ্যে সংহতিকে উৎসাহ দিতে হবে‌।

[৯] আন্তর্জাতিকস্তরে সংহতির প্রয়োজন, কারণ এই সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিকস্তরে পৌঁছতে পারলে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া যাবে।

[১০] সাবর্ণ মানুষরা তাঁদের দ্বারা উপভোগ্য বিশেষ সুবিধাগুলিকে প্রশ্নের মুখে ফেলুক। যদিও সাবর্ণ মানুষরা জাতি ও জাতিবাদ নিয়ে অনেক পাণ্ডিত্যের প্রমাণ দিয়েছেন, এবার প্রয়োজন যে তাঁরা নিজেদের সাবর্ণতার মূল্যায়ন করুক।

স্বীকৃতি

বিশাল কুমার দে, শালিনী মহাদেব, প্রাজ্বাল গায়েক‌ওয়াড এবং বৈশালী খান্দেকার—এঁদের সাথে লেখকের আলাপ-আলোচনা এই বিবরণী পেশ করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে লেখক মনে করেন, এবং তাঁদের ধন্যবাদ জানান।

পরিশিষ্ঠ:

ওয়েবিনারটির একটি বহুমাধ্যমিক প্রতিলিপি এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে।

প্রশ্নোত্তর

সময় কম হ‌ওয়ার ফলে আমরা ওয়েবিনারের শেষে প্রশ্নোত্তর নিতে পারিনি। আমরা তবু সেই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে চেষ্টা করেছি, যা নিম্নলিখিত।

‘রোহিত আইন’ কীভাবে তফশিলী জাতি ও উপজাতি মানুষদের উপর নৃসংতা রোধ আইন বা SC/ST Prevention of Atrocities Act (PoA Act / PoA আইন)-এর থেকে আলাদা? PoA আইন এর ওপর রোহিত আইন কী বিশেষত্ব এনে দেয়? সংস্থানগুলিতে যেহেতু সাবর্ণ ব্যক্তিদের আধিপত্য, কীভাবে নিশ্চিত করা যায় যে রোহিত আইন ন্যয়বিচারের চেতনায় কার্যকার হবে?

রেহনামোল রবীন্দ্রন: রোহিত ভেমুলা আইন বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রে হয়রানি সংক্রান্ত। PoA আইন বৃহৎ প্রসারের, কোন নির্দিষ্ট সার্বজনীন স্থানের জন্য নয়। রোহিত ভেমুলা আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন PoA আইনের বাস্তবায়নের মতোই কঠিন হবে। বাধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও, PoA আইন কিছুটা পরিমাণ জাতিভিত্তিক নৃশংসতা রুখতে সফল হয়েছে। এক‌ই রকম ভাবে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাবর্ণ ব্যক্তিদের আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও রোহিত ভেমুলা আইন সফল হতে পারে কারণ অধ্যাপকদের করা হয়রানি ও জাতিবৈষম্যকে শাস্তির কাঠগড়ায় আনা যাবে।

বিভিন্ন SC/ST শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়: তাঁদের সহকর্মীদের মধ্যে সংবেদনশীলতার অভাব। তাঁদের উচ্চজাত সহকর্মীদের জাতিবেদ এবং অসতর্ক ও অপরিকল্পিত জাতবিচারের ব্যাপারে তাঁদের সংবেদনশীল করার পরামর্শ দিয়েছেন SC/ST শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কীভাবে এমন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করার আলোচনা ও কার্যকলাপ চরিতার্থ করতে পারে?

রেহনামোল রবীন্দ্রন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ ও জাতি ভিত্তিক আলোচনা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলির ওপর নীরবতা বৈষম্যের ব্যাধিকে আরো বাড়িয়ে তোলে। জাতি ও লিঙ্গ সংক্রান্ত দ্বৈত চিন্তাধারার ত্রুটিগুলি শ্রেণিকক্ষে শেখানো হয় না। জাতি ও লিঙ্গ সংক্রান্ত আলোচনা বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং সকল শিক্ষাকেন্দ্রীক উদ্যোগ, শিক্ষার্থী অধ্যয়ন গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংস্থার মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা কীভাবে দমন করা যায়? কীভাবে ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর মানুষদের জন্য অন্তর্ভুক্তিকর করা যায়?

প্রাজ্বাল গায়েক‌ওয়াড: সকল প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলি প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের কোনরকম সাহায্য করতে নারাজ হয়েছে। বরং, এই ঘটনাগুলিকে “জাতি নির্মমতা” বলে মেনে নিতে তারা বারবার নারাজ হয়েছে‌ এবং সকল আইনি সংস্থার থেকে দূরে রেখেছে। যে প্রান্তিকজাতির ব্যক্তিদের সাথে ঘটনাগুলি ঘটেছে, তাঁরা এর ফলে নিঃসঙ্গতা বোধ করেন, আর প্রতিষ্ঠানগুলি অপেক্ষা করে ততক্ষণ যতক্ষণ এই ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানগুলি ছেড়ে চলে যান অথবা আত্মহত্যা করেন। অধ্যাপকমণ্ডলী ও সহকর্মীদের মধ্যে প্রান্তিকজাতির মানুষরা অনুপাতে অনেক কম, তাই উচ্চজাতির দখল ও জাতিসংহতি ক্ষমতার নিরিখে অপরিবর্তিত থাকে। তাই আমাদের নিশ্চিন্ত করতে হবে যে সংরক্ষণনীতি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলি অপরিবর্তনীয়ভাবে জাতিভেদমূলক, তাদের ওপর নির্ভর করার সাথে সাথে প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নগোষ্ঠী ও শিক্ষার্থী সংগ্রহের মাধ্যমে একত্রিত হ‌ওয়া প্রয়োজন, যাতে এই গোষ্ঠী ও সংগ্রহগুলির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায় এবং কোন প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানপ্রাঙ্গণের সমাজজীবন থেকে নিজেকে বহির্ভূত না মনে করেন।

এমনটা দেখা গেছে যে মূল পদগুলি, যেমন উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, ব্যাঙ্কের শাসনকর্তা ও সহকারী শাসনকর্তা—এঁরা সবসময় উচ্চজাতির ব্যক্তি; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঠিক তাই দেখা যায়। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬ তে নির্দিষ্ট পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণনীতি কী ফলপ্রসূ হয়েছে?

প্রাজ্বাল গায়েক‌ওয়াড: প্রান্তিকজাতির মানুষদের ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে উচ্চজাতির হিন্দু ব্যক্তিরা সবসময় পদোন্নতিকে ব্যবহার করেছেন। সকল রাজ্যের সচিবালয়ের দিকে খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে সেখানে SC/ST আমলাদের সংখ্যা কেবলমাত্র সংরক্ষণনীতি অনুসারেই সীমিত রাখা হয়, এমনকি সেই ব্যক্তিদের‌ও এমন পদ দে‌ওয়া হয় যে তাঁরা সমাজের কোন তাৎপর্যপূর্ণ বদল আনতে পারেন না। পদোন্নতিতে সংরক্ষণনীতির বাস্তবায়ন ছাড়া ক্ষমতাবান পদগুলি কখনোই প্রান্তিকজাতির মানুষদের কাছে পৌঁছবে না। ব্রাহ্মণবাদী শক্তিগুলির পদোন্নতিতে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আক্রমণের ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া থেকেই বোঝা যায় যে এই নীতি তাঁদের আধিপত্যকে রুখতে কিছুটা সক্ষম হয়েছে।

সাবর্ণ পরিবার থেকে আসা একজন ব্যক্তি হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘সাবর্ণব্যক্তিদের আধিপত্য’-র বিরুদ্ধে প্রান্তিকজাতির মানুষদের সংগ্রামে আমার কী ভূমিকা সেই নিয়ে আমার ধারণা করতে অসুবিধা হচ্ছে। এই সংগ্রামকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সভার বক্তারা কী বিবেচনা করেন? এবং, তাঁরা আমাদের মতো সাবর্ণ পরিবারের মানুষজনদের এই সংগ্রামে কোন অবস্থানে রাখতে চান? আমি জানি এগুলি সহজ প্রশ্ন নয়, তবে আপনাদের ঐ বিষয়ে চিন্তাভাবনা আমাকে সাহায্য করবে।

প্রাজ্বাল গায়েক‌ওয়াড: দুর্ভাগ্যক্রমে, উচ্চজাতির যে মানুষরা প্রান্তিকজাতির বিভিন্ন সংগ্রামে অংশ নিতে চান, তাঁরা নিজেদের সংগ্রামগুলি ভুলে যান—তাঁদের সাবর্ণ পরিবারমণ্ডলীতে সাবর্ণ মানুষদের অমানবিক জাতিবিদ্বেষকারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। প্রান্তিকজাতির মানুষরা চর্চার বিষয় হিসেবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত, তবে উচ্চজাতির মানুষরা যে বিভিন্ন অযৌক্তিক অভ্যাস ও অনুশীলন করে থাকেন সেগুলিকে কেন অধ্যয়ন করা হবে না? ব্রাহ্মণ পরিবারগুলিতে জাতিবাদ বা পুরুষতন্ত্রের বিষয়ে পাঠ্য কেন এত কম? যে কোন প্রান্তিক সংগ্রামে সাবর্ণ মানুষরা বহিরাগত, এবং তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সংগ্রাম থেকে আমাদের কন্ঠ রুদ্ধ করেন এবং সংগ্রামকে লঘু করেন। এটা বোঝা দরকার যে উল্লিখিত আকাঙক্ষার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করে সাবর্ণ সমাজের করুণামূলক আচরণ, যা আসে তাঁদের সামাজিক অবস্থান থেকে। তাঁরা তাঁদের নিজেদের গবেষণায় জাতিবাদকে অধ্যয়ন করে প্রগতি করেছেন, কিন্তু নিজেদের জাতির কারণে উপভোগ করা সামাজিক অবস্থানের বিষয়ে সচেতনভাবে নীরব থেকেছেন। এর মাধ্যমে সে সকল সাবর্ণ মানুষ যাঁরা নিজেদের প্রান্তিকজাতির মানুষদের মিত্র বলে মনে করেন তাঁদের বোঝা উচিৎ যে গোষ্ঠীসম্প্রদায় গড়ার কাজে তাঁরা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। বরং তাঁরা তাঁদের দ্বারা উপভোগ করা সুবিধাগুলির মাধ্যমে অন্য সাবর্ণ ব্যক্তিদের কাছে আমাদের সংগ্রাম ও আন্দোলন পৌঁছে দিতে পারেন। তাঁদের উচিৎ তাঁদের নিজেদের মধ্যে প্রচলিত জাতিভেদকারী প্রথাগুলি স্বীকার করা এবং সেগুলি থেকে মুক্ত হ‌ওয়া!

ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদারমনস্ক বললেও JNU প্রাঙ্গনে ABVP-র সাথে সংহতি প্রকাশ করতে দেখেছি। এদিকে, বামপন্থী দলগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পদগুলিতে সাবর্ণ ব্যক্তিদের স্থান দেয় আর দলিত ব্যক্তিদের কেবল নামমাত্রে কিছু পদ দিয়ে থাকে। তা সত্বেও দলিত ব্যক্তিরা BAPSA-কে পূর্ণ সমর্থন না করে বামপন্থী দলগুলিকে কিছুটা সমর্থন করে। আমার মনে হয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দরকষাকষির জন্য একত্রিত হয়ে রাজনীতি করার প্রয়োজন। বক্তারা এ বিষয়ে কী মনে করেন?

প্রাজ্বাল গায়েক‌ওয়াড: উচ্চজাতির মানুষরা আদর্শ নির্বিশেষে যে কোন সংস্থায় নিজেদের সংগঠিত করতে পারেন। প্রকাশ্যে জাতিভিত্তিক প্রবণতা থাকা এই সংস্থাগুলিতে দলিত মানুষদের অংশ নে‌ওয়া দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের রাজনীতি আত্ম‌উপলব্ধির উপর দাঁড়ানো উচিৎ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষ হিসেবে আমাদের ভূমিকা হ‌ওয়া উচিৎ আমাদের নিজস্ব প্রতিরোধের ভাষা গড়ে তোলা এবং জাতিগত নিপীড়ন, যা উল্লিখিত সংস্থাগুলিতেও অবিরাম ঘটে চলে, তার উপর যতটা সম্ভব কথোপকথনের সৃষ্টি করা।

পাঠ্যতালিকা

[১] বি.আর. আম্বেডকারের রচনা ও বক্তৃতা: https://velivada.com/2020/02/29/pdf-40-volumes-of-babasaheb-ambedkars-writings-speeches-books-hindi/

[২] পণ্ডিত, লেখক, ও নাগরিক অধিকারকর্মী আনন্দ তেলটুম্বের একটি সাক্ষাৎকার: https://issuesofconcern.in/articles/caste-in-india-evolution-and-manifestation-an-interview-with-prof-anand-teltumbde

[৩] “কামিং আউট অ্যাস় দলিত” শীর্ষক ব‌ইটির লেখিকা য়শিকা দত্ত আই.আই.টি এবং প্রান্তিকজাতির শিক্ষার্থীদের আলাদা করে রাখা বিষয়ে লিখেছেন: https://theprint.in/pageturner/excerpt/the-iits-have-a-long-history-of-systematically-othering-dalit-students/193284/

[৪] আই.আই.এস.সি-তে জাতি এবং জাতিবাদপ্রথাকে সামনে এনেছে রেনী তমাসের কাজ: https://journals.sagepub.com/doi/abs/10.1177/0963662520903690

[৫] শিক্ষাস্তরে দলিত হ‌ওয়ার অভিজ্ঞতাকে কীভাবে প্রদর্শিত করা হয় তা নিয়ে বৈশালী খান্দেকার ও শালিনী মহাদেবের কথোপকথন: https://thelifeofscience.com/2020/11/12/museumization-dalit-experience/

[৬] আই.আই.টি–মাদ্রাসে জাতি এবং জাতিভেদপ্রথা নিয়ে অজন্তা সুব্রামানিয়ানের প্রবন্ধ: https://openthemagazine.com/essays/open-essay/an-anatomy-of-the-caste-culture-at-iit-madras/

সম্পাদকীয় দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধটির একটি পূর্ববর্তী সংস্করণ TheWireScience-এর সম্পাদক বাসুদেবান মুকুন্ত সম্পাদনা করেছিলেন এবং TheWire.in-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

About the author(s)
Sayantan Datta
Sayantan Datta

Sayantan (they/them) is a queer-trans science writer, journalist and communicator.